
মৌলভীবাজারে প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারে তরুণ আইনজীবী সুজন মিয়া হত্যা রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। মামলার মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৫ ঘাতককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানানো হয়েছে। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এসব তথ্য জানিয়েছেন। পলাতক অপরাপর আসামীদের ও সনাক্ত করা গেছে খুব দ্রুতই পলাতকদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে পুলিশ সুপার উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
গত ৬ এপ্রিল রাত সাগে ১০ টার দিকে মৌলভীবাজার পৌরসভার পশ্চিম পাশে মেইন রোড সংলগ্ন ৪নং সাক্ষীর ভাসমান তামান্না ফুসকা চটপটির দোকানের পাশে ফুটপাতের উপর আইনজীবি সুজন মিয়াকে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন মিলে ধারালো চাকু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করে। উক্ত ঘটনার বিষয়ে মৃতের ভাই এনামুল হক সুমন এর এজাহারের প্রেক্ষিতে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার মামলা নং-১৫, তাং-০৮/০৪/২০২৫ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজুহয়।
বৃহস্পতিবার ১০ এপ্রিল পুলিশ সুপার কনফারেন্স হলে পুলিশ সুপার এম, কে, এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদেরকে এসব তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জানান, মামলা রুজু হওয়ার পর নজির মিয়া (ঘ) মুজিব ভাড়াটিয়া দুষ্কৃতিকারী এবং লক্ষনের নিকট মোবাইলের মাধ্যমে টার্গেটের ছবি প্রেরণ করে। ঘটনার দিন বানিজ্য মেলায় ভাড়াটিয়া দুষ্কৃতিকারীরা ভিকটিম সুজনকে দেখে মিসবাহ ভেবে নজির মিয়া (@ মুজিবকে কল দিয়ে বলে যে লোকের ছবি পাঠিয়েছো সেই লোককে আমরা পেয়েছি। নজির মিয়া @ মুজিব ভাড়াটিয়া দুষ্কৃতিকারীদের ভিডিও কলের মাধ্যমে টার্গেট দেখিয়া নিশ্চিত করতে বলে। ভিকটিম সুজনকে দুষ্কৃতিকারী আব্দুর রহিম ইস্যুতে ভিডিও কল দিয়ে নজির মিয়া @ মুজিবকে টার্গেটকে দেখায়। তখন ভাড়াটিয়া দুষ্কৃতিকারীরা জানায় তোমার পাঠানো ছবির সাথে মিল আছে বলিলে নজির মিয়া (@ মুজিব তাদেরকে মারতে বলে।
ঘটনার দিন ০৬/০৪/২০২৫ ইং তারিখ রাত অনুমান ১০.৫০ ঘটিকায় ঘটনাস্থল মৌলভীবাজার সদর মডেল থানাধীন মৌলভীবাজার পৌরসভার পশ্চিম পাশে মেইন রোড সংলগ্ন ৪নং সাক্ষীর ভাসমান তামান্না ফুসকা চটপটির দোকানের পাশে ফুটপাতের উপর আইনজীবি সুজন মিয়াকে চেয়ারে বসা দেখিয়া ধৃত আসামীরাসহ আরো অন্যান্য ১০/১২ জন আসামীরা অতর্কিত আক্রমন করে ধারালো চাকু দিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে ভিটকিমকে হত্যা করে। ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের তৎপরতা অব্যাহত আছে। মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ অন্যান্য পলাতক হত্যাকারীদের পরিচয় উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে, তবে মামলার তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ঘটনার সময় আসামী নজির মিয়া @ মুজিব যে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি প্রেরণ করিয়াছিল সেই মোবাইল ফোন উদ্ধার করে জব্দ করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার সদর মডেল থানা এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা সহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার নিমিত্তে “টিম মৌলভীবাজার সদর মডেল থানা” পুলিশ বদ্ধপরিকর।
আরো তথ্য সংযুক্ত:-
মৌলভীবাজারে আইনজীবী সুজন মিয়াকে হত্যার ঘটনার ৩দিন পর রহস্যের জট খুলেছে। ব্যাংকের এক সিকিউরিটি গার্ডকে মারার জন্য নিযুক্ত করা ‘ভাড়াটিয়া দুষ্কৃতিকারীরা’ চেহারার সাথে মিল দেখে হত্যা করেছে সুজনকে। এঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারীকে আটকের পর সুজন হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। এ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৫ জনকে আটক করেছে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানাতে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় পুলিশ সুপার এম.কে.এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করেন।
পুলিশ সুপার জানান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসুদেবশ্রী এলাকার সামছুল হকের ছেলে নাজির মিয়া ওরফে মুজিবের সাথে অগ্রণী ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ড একই এলাকার মিসবাহের পূর্ব বিরোধ ছিল। মুজিব তার প্রতিপক্ষ মিসবাহকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিলেন। এজন্য রাজনগর উপজেলার মাথিউড়া চা বাগানের মনা নাইডুর ছেলে দুধ ব্যবসায়ী লক্ষণ নাইডুর সহযোগিতায় কয়েকজন লোক ভাড়া করা হয়। ভাড়াটে লোকজন ও লক্ষণ নাইডুর কাছে মূল পরিকল্পনাকারী মুজিব মুঠোফোনের মাধ্যমে মিসবাহ’র ছবি পাঠায়। ঘটনার দিন ভাড়াটে হত্যাকারীরা মৌলভীবাজার শহরে বানিজ্য মেলায় আইনজীবী সুজনকে দেখে তাদের ‘টার্গেট’ মিসবাহ মনে করে। তারা টার্গেটের ছবির ব্যক্তির সাথে মিল থাকার বিষয়টি মূল পরিকল্পনাকারী মুজিবকে জানালে ভিডিও কলের মাধ্যমে সুজনকে দেখে মিসবাহ ভেবে মারতে বলেন মুজিব। নির্দেশ পেয়ে দুষ্কৃতিকারীরা সুজন মিয়ার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এসময় ধারালো ছুরি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করলে গুরুতর আহত সুজন মিয়াকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ আসামী শনাক্তে বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত করতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নিহতের ভাই এনামুল হক সুমন মঙ্গলবার মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা (নং-১৫, তাং-০৮/০৪/২০২৫) দায়ের করেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ পর্যন্ত পুলিশ ৫ জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলো- মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসুদেবশ্রী এলাকার সামছুল হকের ছেলে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নজির মিয়া ওরফে মুজিব (২৫), রঘুনন্দনপুর এলাকার মৃত সিজিল মিয়ার ছেলে মো. আরিফ মিয়া (২৭), দিশালোক ইটা সিংকাপন এলাকার আনসার মিয়ার ছেলে হোসাইন আহমদ ওরফে সোহান (১৯), রাজনগর উপজেলার মাথিউড়া চা বাগানের মনা নাইডুর ছেলে লক্ষণ নাইডু (২৩), নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার কাশিপুর পূর্বপাড়া এলাকার মো. রফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রহিম (১৯)। এছাড়া পলাতক অন্য আসামীদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম.কে.এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিকে পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। ইতোমধ্যে পুলিশ অফিসারদের নিরলস চেষ্টায় মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামীদেরও গ্রেফতার করতে আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই পলাতক আসামীদের নাম বলা যাচ্ছে না।